মানুষকে কিয়ামতের দিন ১২টি শ্রেণীতে স্মাবিত করা হবে
হাদিস এর আলোয় ব্যাখ্যা
হযরত মুআজ ইবনে জাবাল রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম সা. কে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আল্লাহর এই এরশাদ সম্পর্কে অবহিত করুন যে, যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে সমাগত হবে। একথা শুনে নবী সা. এত  জোরে ক্রন্দ করলেন যে, তার কাপড় মোবারক ভিজে গেল। নবী সা. বললেন, হে মুআজ! তুমি আমাকে বড় ধরনের প্রশ্ন করেছো। আমার উম্মাতকে ১২টি শ্রেণীতে সমবেত করা হবে।
১. তাদেরকে হাত-পা ব্যতিত সমবেত করা হবে। সুতরাং ঘোষক রহমানের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেবে যে, এরা হলো সেই সকল লোক যারা নিজেদের প্রতিবেশীকে কষ্ট দিতো। সুতরাং এটাই তাদের শাস্তি এবং তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। আল্লাহর এই ইরশাদের কারণে যে, ‘তোমরা নিকটপ্রতিবেশী ও দুরপ্রতিবেশীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর।’ [সূরা নিসা : ৬৩]
২. শূকরের আকৃতিতে কবর থেকে উঠানো হবে। অনন্তর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষক ঘোষণা দিবে যে, এরা ওই সকল লোক যারা নামাজে অলসতা করেছে। আর এটাই তাদের শাস্তি এবং তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। আল্লাহর এই এরশাদের কারণে যে,  ‘অতএব দুর্ভোগ সেসব নামাযীর যারা তাদের নামাযের ব্যাপারে বেখবর।’ [সূরা মাঊন : ৪-৫]
৩. কবর থেকে পর্বতসম পেট নিয়ে বের হবে। তাদের পেট গাধার মতো সাপ-বিচ্ছুতে ভরপুর হবে। এদিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষক ঘোষণা দিবে যে, এরা সেই সব লোক যারা যাকাত দিত না। এটাই তাদের শাস্তি এবং তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। কেননা, আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেছেন  ‘যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে রাখে আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও। ’ [সূরা তাওবা : ৩৪]
৪. একদল যাদেরকে তাদের কবর থেকে উঠানো হবে এমতাবস্থায় তাদের মুখ দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হবে। আর আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষক ঘোষণা দিবে যে, এরা সেই সকল লোক, যারা বেচাকেনার সময় মিথ্যা কথা বলত। এটাই হলো তাদের শাস্তি, আর তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,  ‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর অঙ্গীকার ও তাদের শপথের বিনিময়ে খরিদ করে তুচ্ছ মূল্য, পরকালে এদের জন্য কোন অংশ নেই।’ [সূরা আল-ইমরান : ৭৭]
৫. একদল যারা কবর থেকে পেট ফুলা অবস্থায় উঠবে। তাদের দেহ মানুষের লাশ থেকেও অধিক দুর্গন্ধযুক্ত হবে। এদিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষক ঘোষণা  দিবে যে, এরা সেই সকল লোক! যারা মানুষের ভয়ে অপরাধ গোপন করত। কিন্তু আল্লাহকে ভয় করত না। আর এ অবস্থায় তারা মারা গেল।  এটাই হলো তাদের শাস্তি এবং তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেন- ‘এরা মানুষের নিকট গোপন করে, কিন্তু আল্লাহর নিকট গোপন করে না।’ [সূরা নিসা : ১০৮]
৬.  একদল গলা ও পিঠ কাটা অবস্থায়  উঠবে। এদিকে ঘোষক আল্লাহ পক্ষ থেকে ঘোষণা দিবে যে, এরা সেই সকল লোক যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দিত। সুতরাং এটাই তাদের শাস্তি এবং তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,  ‘যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।’
৭. একদল তারা কবর থেকে জিহ্বা ব্যতীত উঠবে তাদের মুখ থেকে রক্ত ও পুঁজ বের হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষক ঘোষণা দিবে যে, এরা সেই সকল লোক যারা সঠিক সাক্ষ্য দিতে বাঁধা দিতো। এটাই হলো তাদের শাস্তি এবং তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,  ‘আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না এবং যে কেউ তা গোপন করে, অবশ্যই তার অন্তর পাপী।’ [সূরা বাকারা : ২৮৩]
৮. একদল কবর থেকে এভাবে উঠবে যে, তাদের মাথা উল্টানো থাকবে এবং তাদের মাথার ওপর পা থাকবে। ঘোষক আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেবে যে, এরা সেই সকল লোক! যারা ব্যভিচার করেছে এবং তওবা না করে মারা গিয়েছে। এটাই হলো তাদের শাস্তি এবং তাদের ঠিকানা হলো জাহান্নাম। কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,  ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেওনা। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ [সূরা আল-ইসরা : ৩২]
৯. একদল কবর থেকে কালো চেহারা, নীল চক্ষু এবং পেট ভর্তি আগুনসহ উঠবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষক ঘোষণা দিবে যে, এরা সেই সকল লোক! যারা ইয়াতিমের মাল-সম্পদ জুলুম করে ভক্ষণ করেছে। কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,  ‘যারা ইয়াতিমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে খায়, তারা নিজেরদের পেটে আগুনই ভর্তি করেছে এবং সত্ত্বরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।’ [সূরা নিসা : ১০]
১০. একদল শ্বেত ও কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত অবস্থায় উঠবে। ঘোষক আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেবে যে, এরা সেই সকল লোক যারা পিতা-মাতার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,  ‘তোমরা পিতামাতার সাথে সদাচরণ কর।’ [সূরা বাকারা : ৮৩]
১১. একদল কবর থেকে চোখ অন্ধ অবস্থায় উঠবে, তাদের দাঁত ষাঁড়ের শিংয়ের মতো দেখা যাবে। তাদের ঠোঁটসমূহ বুকের ওপর নিক্ষিপ্ত হবে, যবান পেটের এবং রানের উপর নিক্ষিপ্ত হবে। তাদের পেট থেকে ঢেকুর বের হবে। আর ঘোষক ঘোষণা দিবে যে, এরা সেই সকল লোক! যারা মদ পান করত। কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,  ‘মদ, জুয়া, প্রতিমা এবং ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ। অতএব এগুলো থেকে বেঁচে থাক।’ [সূরা মায়েদা : ৯০]
১২. এক দল পূর্ণিমার চন্দ্রের মতো উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট অবস্থায় উঠবে। তারা ক্ষিপ্র বিদ্যুতের মতো পুলসিরাত পার হবে। আর ঘোষক ঘোষণা দিবে যে, এরা নেক কাজ করেছে এবং গোনাহ বর্জন করেছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েছে এবং তওবা অবস্থায় মারা গিয়েছে। সুতরাং তাদের প্রতিদান হলো জান্নাত, ক্ষমা, অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি। কেননা, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তোমরা ভয় করো না এবং বিচলিত হয়ো না। [তাফসীরে কাবীর, তাম্বীহুল গাফেলীন,  দুররাতুন নাসেহীন : ১৬৬]
ধন্যবাদ বিষয়টি পড়ার জন্যে (আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হেফাজত করুন)
আমিন
 

 
 
 
 IslamPriyos – Learn And  Share Everything About of Islam! And Increase Your Knowledge About Islam.Because We Are Muslime.
IslamPriyos – Learn And  Share Everything About of Islam! And Increase Your Knowledge About Islam.Because We Are Muslime.
No comments:
Post a Comment